Sunday, November 2

স্টাফ রিপোর্টার | ঢাকা রিপোর্ট

অক্টোবর ছিল ডেঙ্গু সংক্রমণের এক ভয়াবহ মাস। সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ২২ হাজার মানুষ, আর প্রাণ হারিয়েছেন ৮০ জন। বিভিন্ন হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এ বছর নভেম্বর ও ডিসেম্বরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ অব্যাহত থাকতে পারে।

রাজধানীর মহাখালীর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরের শেষ ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ১৪৯ জন রোগী, যার মধ্যে ১২৮ জনই ডেঙ্গু আক্রান্ত — যা এ বছরের এক দিনে সর্বোচ্চ। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৭৯ জন রোগী।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ভর্তি রোগীদের প্রায় ৮০ শতাংশই নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা। এছাড়াও রাজধানীর ভাটারা, বাড্ডা ও ডেমরা এলাকার রোগীর সংখ্যাও বেশি। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ—তাদের এলাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিধনের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ বা ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে না, ফলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েই চলছে।

গত বছরের তুলনায় এ বছর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। গত বছর ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৬১ হাজার, আর এ বছর সেটি ৭০ হাজারে পৌঁছেছে। আগস্টের তুলনায় অক্টোবর মাসে দ্বিগুণ রোগী শনাক্ত হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, “ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি স্ট্রেন থাকায় একজন মানুষ একাধিকবার আক্রান্ত হতে পারেন। প্রতিবার নতুন স্ট্রেনে আক্রান্ত হলে জটিলতা বেড়ে যায়।”
তিনি আরও জানান, অনেক সময় জ্বর কমে গেলেও শরীরের ভেতরে গুরুতর অবস্থা তৈরি হতে পারে, যা রোগীরা টেরই পান না।

অন্যদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান জানান, “রোগীরা যেন দ্রুত ডেঙ্গু শনাক্ত করতে পারেন, সে জন্য এখন বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা চালু করা হয়েছে। মাত্র ৫০ টাকার কারণে কেউ যেন টেস্ট করাতে দেরি না করে—এটাই উদ্দেশ্য।” তিনি বলেন, “জনগণের পাশে থাকতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।”

তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত ২৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে গত তিন মাসেই প্রায় দুই শ’ জন মারা গেছেন।

কীটতত্ত্ববিদরা সতর্ক করে বলছেন, এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, “এখনও এডিস মশা ডেঙ্গু ছড়ানোর উপযোগী অবস্থায় আছে। সাধারণত নভেম্বরের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়, কিন্তু এ বছর তা হবে না।”

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ হিসাবে, দেশজুড়ে বর্তমানে প্রায় তিন হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—মশা জন্মস্থল ধ্বংস, নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং দ্রুত ডেঙ্গু পরীক্ষা করানোই সংক্রমণ রোধের মূল উপায়।

Leave A Reply


Math Captcha
44 − 42 =