জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে জামায়াতের সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল ইসির কাছে ১৮ দফা দাবি ও সুপারিশ উপস্থাপন করে।
বৈঠকে দলের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ার। সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাসুম ও রফিকুল ইসলাম খান, নির্বাহী পরিষদের সদস্য এইচএম হামিদুর রহমান আজাদ, মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম এবং উত্তর আমির মোহাম্মদ সেলিম।
বৈঠকে উত্থাপিত দাবিগুলো
জামায়াতের ১৮ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম হলো—
- আগামী নভেম্বরেই গণভোট আয়োজন, যাতে জনগণ জাতীয় সনদ ও সংস্কারমূলক কাঠামো সম্পর্কে মত দিতে পারে।
- ইসির ওয়েবসাইটে জাতীয় সনদ প্রকাশ করে জনগণকে অবহিত করা।
- নির্বাচনের আগে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক দলের সমান সুযোগ সৃষ্টি করা।
- সকল ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত সামরিক বাহিনীর সদস্য নিয়োগ এবং সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা।
- প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব না দেওয়া ও লটারির ভিত্তিতে মাঠ প্রশাসন নিয়োগ।
- বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার।
- নির্বাচনী এলাকায় সন্ত্রাস দমন ও ভোটারদের নিরাপদে ভোট দেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি।
- প্রবাসী ভোটারদের জন্য ভোট প্রদানের প্রক্রিয়া সহজ করা এবং তাদের তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোকে সরবরাহ।
- নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের নিরপেক্ষতা যাচাই ও ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র পরিবর্তন।
গোলাম পরওয়ারের বক্তব্য
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন,
“আমাদের ১৮ দফা প্রস্তাবের মধ্যে অন্যতম হলো জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করা। জনগণ না জেনে ভোট দিলে গণভোটের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে।”
তিনি আরও বলেন,
“ইসি যেন সংস্কার ও জাতীয় সনদের বিষয়গুলো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে জনগণকে জানায়। একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হলে সহিংসতার ঝুঁকি থাকে।”
তিনি দাবি করেন, ইসি ও কমিশনাররা ধৈর্যসহকারে তাঁদের বক্তব্য শুনেছেন এবং সম্ভাব্য পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করেছেন।
“আমরাও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি— We are always ready to give all kinds of cooperation,” বলেন গোলাম পরওয়ার।
জোটবদ্ধ নির্বাচনে প্রতীকের বিষয়ে তিনি জানান,
“প্রত্যেক দল নিজ নিজ প্রতীকে ভোট করবে, তবে জোট গঠনের সুযোগ থাকবে। অন্য দলের প্রতীক ব্যবহার করা যাবে না।”
বিএনপির আপত্তি প্রসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন,
“বিএনপির এক নেতার সঙ্গে একজন উপদেষ্টার ‘জেন্টলম্যান এগ্রিমেন্ট’-এর মাধ্যমে এই বিধান পরিবর্তনের চেষ্টা হচ্ছে, যা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ভঙ্গের উদাহরণ।”
ইসলামী ব্যাংকসহ কিছু প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,
“জামায়াতের সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো মালিকানা বা সাংগঠনিক সম্পর্ক নেই। বিএনপির অনেক নেতারও ব্যাংক আছে—তাহলে আমরা তাদের তালিকা দিতে পারতাম।”
বৈঠকে নির্বাচন কমিশন ও জামায়াত প্রতিনিধিদল সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে।

