Tuesday, November 4

গাজার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত আল-আকসা হাসপাতাল এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের আশ্রয়কেন্দ্র। এখানে চিকিৎসার সরঞ্জাম ও ওষুধের অভাবে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছে।

বিসান আবু আমির নামের এক তরুণীর মা জানান, তাঁর মেয়ের কী অসুখ, চিকিৎসকেরাও তা নির্ণয় করতে পারছেন না। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না সরঞ্জামের অভাবে। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসা মেলেনি।

একই ওয়ার্ডে ১৩ বছর বয়সী ওয়ালিদ নামে এক কিশোর পড়ে আছে, যিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তাঁর মা দাবি করেন, ইসরায়েলি বাহিনীর ছোড়া বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে ওয়ালিদ এখন কথা বলা বা নড়াচড়া—কোনোটিই করতে পারছে না।

গাজা জুড়ে মানুষ এখন জীবন বাঁচাতে লড়ছে। খাবার, পানি, আশ্রয়—সবকিছুরই ঘাটতি। হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা না থাকায় হাজারো রোগী মৃত্যুমুখে। অনেক পরিবার এখনো তাদের স্বজনের মরদেহ খুঁজে পাচ্ছে না। গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে অন্তত ১০ হাজার মরদেহ চাপা পড়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উদ্ধার সরঞ্জাম না থাকায় সেগুলো তুলতে পারছে না স্থানীয়রা।

এদিকে, আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় চার হাজার শিশুসহ কমপক্ষে ১৫ হাজার রোগী এখন গাজার বাইরে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু কয়েক মাস ধরে মিসরের রাফাহ সীমান্ত বন্ধ থাকায় তারা আটকা পড়ে আছে।

অন্যদিকে, হামাস রেড ক্রসের মাধ্যমে তিন ইসরায়েলি সেনার মৃতদেহ ফেরত দিয়েছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসের হাতে আরও আটজন জিম্মির মৃতদেহ রয়েছে।

দক্ষিণ গাজার খানইউনিস, গাজার পূর্বাঞ্চল এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরজুড়ে নতুন করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে একাধিক ফিলিস্তিনি নিহত ও আহত হয়েছেন। সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির পর থেকে গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৩৬ জনে দাঁড়িয়েছে। গত দুই বছরে মোট ৬৮ হাজার ৮৫৮ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিবিএস নিউজকে বলেন, “গাজায় পক্ষগুলো যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করলেও আমি যে মধ্যস্থতার উদ্যোগ নিয়েছিলাম, তা ভঙ্গুর নয়।”

আনাদোলু নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, গাজার মিডিয়া অফিসের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও ইসরায়েল ভারী উদ্ধার সরঞ্জাম প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৯ হাজার ৫০০ ফিলিস্তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। গাজার ৯০ শতাংশ বেসামরিক ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে।

এ ছাড়া, চুক্তি অনুযায়ী গাজায় তিন লাখের বেশি তাঁবু পাঠানোর কথা থাকলেও ইসরায়েল তা পাঠায়নি। ফলে দুই লাখ ৮৮ হাজার পরিবার খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে।

Leave A Reply


Math Captcha
59 − 51 =