গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও সেখানে মানবিক সহায়তার পরিমাণে তেমন কোনো উন্নতি হয়নি এবং ক্ষুধা হ্রাসেরও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)।
বৃহস্পতিবার জেনেভায় সংস্থার সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস বলেন, “পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ। সহায়তা প্রবেশ করছে, কিন্তু তা একেবারেই পর্যাপ্ত নয়।”
তিনি জানান, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পরও গাজার মানুষের খাদ্য ও চিকিৎসা সংকট কমেনি। টেড্রোস বলেন, “যুদ্ধবিরতির পরও ক্ষুধার ওপর কোনো প্রভাব পড়েনি, কারণ পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ এখনো সম্ভব হয়নি।”
যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েলের বারবার ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ বন্ধ করার কারণে ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, এর ফলে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের কিছু অংশে দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের কথা থাকলেও বর্তমানে মাত্র ২০০ থেকে ৩০০টি ট্রাক গাজায় ঢুকছে বলে জানান টেড্রোস। তিনি বলেন, “এই ট্রাকগুলোর বড় একটি অংশ বাণিজ্যিক, অর্থাৎ যাদের ক্রয়ক্ষমতা নেই তারা এখনো কোনো সহায়তা পাচ্ছে না।”
টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস যুদ্ধবিরতি বজায় রাখাকে ইতিবাচক বলে উল্লেখ করলেও সতর্ক করে বলেন, “সংকট এখনো অনেক দূরে শেষ হয়নি, চাহিদা ব্যাপক এবং সহায়তা এখনো প্রয়োজনীয় পরিমাণের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র।”
তিনি জানান, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে। “গাজায় এখন কোনো পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর হাসপাতাল নেই,” বলেন টেড্রোস। “৩৬টির মধ্যে মাত্র ১৪টি হাসপাতাল আংশিকভাবে চালু আছে, তাও প্রয়োজনীয় ওষুধ, সরঞ্জাম ও কর্মীর চরম সংকটে।”
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন করে চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠানো, অতিরিক্ত জরুরি চিকিৎসা দল মোতায়েন এবং রোগী স্থানান্তরের কার্যক্রম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান তিনি।
শেষে টেড্রোস সতর্ক করে বলেন, “গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুনর্গঠনের জন্য কমপক্ষে সাত বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে।”
সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জেনেভা

