রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে মা লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা বিনতে আজিজকে (১৫) হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি গৃহকর্মী আয়েশা (২০) গ্রেপ্তার হয়েছে। ঝালকাঠির নলছিটি এলাকা থেকে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) তাকে গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে আয়েশা জানায়, চুরি করে পালানোর সময় বাধা দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে সে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত আয়েশার বাড়ি নরসিংদী সদর থানার সলিমগঞ্জে। বর্তমানে তিনি সাভারের হেমায়েতপুর পূর্বহাটিতে স্বামী রাব্বি সিকদারকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। হত্যার পর আত্মগোপনে চলে যাওয়ার সময় তিনি স্বামীকেও বিষয়টি জানান। পুলিশ স্বামী রাব্বিকেও হেফাজতে নিয়েছে।

তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় তদন্ত চালিয়ে আয়েশার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। প্রথমে তার বর্তমান বাসায় অভিযান চালানো হয়। পরে তার মায়ের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, সে ঝালকাঠির নলছিটিতে দাদার শ্বশুরবাড়িতে লুকিয়ে আছে। সেখানেই অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, আয়েশা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে—এক দিন আগে ওই বাসা থেকে কিছু মালামাল চুরি করে। পরদিন বাসা ছাড়ার সময় লায়লা আফরোজ তাকে তল্লাশি করতে চান এবং পুলিশে দেওয়ার কথা বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে লায়লাকে হত্যা করে। পরে নাফিসা এগিয়ে এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। এরপর বাসা থেকে দুটি ল্যাপটপ ও একটি মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। এর মধ্যে একটি ল্যাপটপ সে বিক্রি করেছে, অন্যটি উদ্ধার করা গেছে। চুরি করা মোবাইলটি পানিতে ফেলে দেয়।
পুলিশ জানায়, ঘটনার পর আয়েশা গোসল করে স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজে সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে তাকে বোরকা পরে বাসায় ঢুকতে এবং সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে স্কুলড্রেস পরে বের হতে দেখা যায়। পরে বাসার বাথরুমের বালতি থেকে হত্যায় ব্যবহৃত দুটি ছুরি উদ্ধার করা হয়।
গত সোমবার সপ্তম তলার ওই বাসায় মা–মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত লায়লার স্বামী আ. জ. ম. আজিজুল ইসলাম গৃহকর্মী আয়েশাকে একমাত্র আসামি করে মামলা করেন। সুরতহাল প্রতিবেদনে লায়লার শরীরে কমপক্ষে ৩০টি এবং নাফিসার শরীরে ৬টি ধারালো অস্ত্রের আঘাত পাওয়া যায়।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, আয়েশা ও তার স্বামীকে নিয়ে ঢাকায় আনা হচ্ছে। হত্যার পেছনে আরও কোনো কারণ আছে কিনা, তা তদন্তে নিশ্চিত করা হবে।

