গত ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নির্বাচন নিয়ে নিরাপত্তা শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর ১৩ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর ও পিরোজপুরে দুটি নির্বাচনী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পাশাপাশি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন হামলা ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সর্বশেষ গত বুধবার দিবাগত রাতে ফেনী সদর উপজেলার শর্শাদি বাজার এলাকায় গ্রামীণ ব্যাংকের শর্শাদি শাখায় দুর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগ করে। এতে ব্যাংকের তিনটি মোটরসাইকেল ও আসবাবপত্র পুড়ে যায়।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, এসব ঘটনার পর নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে কমিশনের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এ কারণে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সব নির্বাচন কমিশনার, রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার এবং তাঁদের কার্যালয়ের নিরাপত্তা জোরদারের জন্য পুলিশের বিভিন্ন বিভাগে একাধিকবার চিঠি পাঠিয়েছে ইসি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গেও একাধিক বৈঠকে নিরাপত্তা শঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।
তবে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের শঙ্কা নেই বলে দাবি করেছেন। বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন,
‘নির্বাচনী নিরাপত্তা নিয়ে তেমন কোনো শঙ্কা নেই। তবে একটি ঘটনা ঘটেছে বলেই আমরা বাড়তি নিরাপত্তার কথা বলেছি, যাতে কেউ নাশকতার সুযোগ না পায়।’
এর আগে ১৪ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা ব্যর্থ হবে। তবে তিনি চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দেননি।
এ অবস্থায় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে সারা দেশে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের কার্যালয়ের নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দিয়েছে ইসি। বৃহস্পতিবার ইসির উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠানো হয়। চিঠিতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক পুলিশ ফোর্স মোতায়েনের অনুরোধ জানানো হয়।
এর পাশাপাশি প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার কমিশনার, ইসি সচিব, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সব রিটার্নিং অফিসারের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা, গানম্যান ও পুলিশি এসকর্ট চাওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তা শঙ্কা জানিয়ে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী রেহা কবির সিগমা। এছাড়া মৌখিকভাবে নিরাপত্তা চেয়েছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৩ আসনের প্রার্থী আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
এদিকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত বুধবার বিশেষ পরিপত্র জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে সামরিক বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি, বডি ক্যামেরা ও লাইভ ফিড চালুর কথাও বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর এবং নির্বাচনী প্রচার চলবে ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত।

