Saturday, December 20

রাতভর কান্না আর শোকের আবহ যেন পুরো গ্রামজুড়ে। শুক্রবার সকাল থেকে মসজিদের মাইকে বারবার ভেসে আসতে ছিল ঘোষণা—কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামের রাকিব উদ্দীনের দুই বছরের শিশু সাজিদ আর নেই। সকাল সাড়ে ১০টায় নেককিড়ি কবরস্থানসংলগ্ন মাঠে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয় তার।

মসজিদের ঘোষণা শোনার পর থেমে যায় গ্রামের সব কাজকর্ম। লোকজন দোকানপাট বন্ধ রেখে মাঠের বদলে ছুটে যান সাজিদের বাড়ির দিকে। সবাই একবার দেখতে চান সেই নিষ্পাপ মুখটি, যে মুখ প্রতিদিন হাসত, অথচ আজ নিথর ও নীরব। শিশু সাজিদের মরদেহ গ্রামে পৌঁছে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে।

এর আগে গভীর নলকূপের ৪০ ফুট মাটি খনন করে ৩২ ঘণ্টার চেষ্টার পর বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে তাকে উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। শিশুটিকে উদ্ধার করে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শুক্রবার সকালে জানাজার মাঠে মানুষের ঢল নামে। বৃদ্ধ থেকে শুরু করে স্কুলপড়ুয়া ছেলেরা—সবার চোখ ভিজে ছিল। সাদা কাপড়ে মোড়ানো ছোট্ট দেহটি যখন মানুষের সামনে আনা হলো, তখন চারদিকে কান্নার রোল পড়ে যায়। শিশুটির মা বারবার ছুটে যেতে চাইছিলেন ছেলের কাছে, স্বজনেরা ধরে রাখলেও তার আর্তনাদ থামানো যায়নি।

জানাজার নামাজ পড়ান কাজী মাওলানা মিজানুর রহমান। দোয়ার সময় হাজারো হাত উঠেছিল আকাশের দিকে। সবাই ছোট্ট সাজিদের মাগফিরাতের পাশাপাশি শোকাহত পরিবারের জন্য ধৈর্য প্রার্থনা করেন।

জানাজা শেষে যখন ছোট্ট কফিনটি কবরের দিকে নেওয়া হয়, চারপাশের বাতাস যেন ভারী হয়ে ওঠে। গ্রামবাসীর অনেকেই বলছিলেন, শিশু জানাজায় এমনভাবে পুরো গ্রামের একত্র হওয়া—এ দৃশ্য তারা কখনও দেখেননি।

বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে নিখোঁজ হয়েছিল সাজিদ। ৩২ ঘণ্টার অভিযান শেষে উদ্ধার হলেও তাকে আর জীবিত ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।

Leave A Reply


Math Captcha
− 6 = 1