রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে নিজেদের ফ্ল্যাটে মা লায়লা আফরোজ ও মেয়ে নাফিসা লাওয়ালের হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন ‘গৃহকর্মী আয়েশা’কে শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তার প্রকৃত নাম-পরিচয় এবং তার স্বামীর পরিচয়ও জানা গেছে। তবে শনাক্ত হলেও মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ওই তরুণীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলেও গ্রেফতারের পর আনুষ্ঠানিকভাবে তা প্রকাশ করা হবে। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদেই হত্যার মোটিভ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে বলে মনে করছে তদন্ত সংস্থা।
ঘটনার চার দিন আগে ভবনের নিরাপত্তাকর্মীর মাধ্যমে ওই তরুণীকে কাজে নেন লায়লা আফরোজ। নিরাপত্তাকর্মী জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে গৃহকর্মীর প্রয়োজনের কথা বলায় তিনি কাজের খোঁজে আসা এক নারীকে লায়লার কাছে নিয়ে যান। তবে ওই নারীর সঙ্গে তার কোনো পূর্ব পরিচয় ছিল না। নিহতদের স্বজনরা জানান, গৃহকর্মী আয়েশা প্রতিদিন সকালে এসে কাজ শেষে চলে যেতেন। পরিচয় ও মোবাইল নম্বর জানতে চাওয়া হলেও নানা অজুহাতে তিনি তা এড়িয়ে যান।
গত সোমবার সকালে শাহজাহান রোডের ১৪ তলা ভবনের সপ্তম তলার ফ্ল্যাটে লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিয়াকে (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর ভবনের ভেতরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, এক নারী স্কুলড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ভবন থেকে বের হচ্ছেন। চার দিন আগে ‘আয়েশা’ নামে কাজ নেওয়া সেই তরুণীই জোড়া খুনের সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ স্বজনদের। ঘটনার পর থেকে সে পলাতক।
পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থা যৌথভাবে তদন্তে নেমেছে। তদন্তকারীরা জানান, ওই তরুণী তার আসল নাম-ঠিকানা গোপন করেছিলেন এবং তার কাছে কোনো মোবাইল ফোনও ছিল না। বাসা থেকে যে ফোনটি নিয়ে গেছেন, সেটিও বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেন। আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো সচল না থাকায় তিনি কোন দিকে পালিয়ে গেছেন তা শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। সব ধরনের সম্ভাব্য পদ্ধতি অনুসরণ করে তাকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় তদন্ত দল।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান বলেন, গৃহকর্মীর প্রকৃত পরিচয় জানা না থাকায় তদন্তে শুরুতে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছিল। অবশেষে প্রযুক্তি ও ম্যানুয়াল অনুসন্ধানের মাধ্যমে তাকে শনাক্ত করা গেছে।
জোড়া খুনের ঘটনায় নিহত লায়লার স্বামী আ জ ম আজিজুল ইসলাম মোহাম্মদপুর থানায় গৃহকর্মী আয়েশাকে একমাত্র আসামি করে মামলা করেন। মামলার এজাহারে তিনি জানান, সোমবার সকাল ৭টায় তিনি স্কুলে যান। পরে স্ত্রীকে একাধিকবার ফোন করেও যোগাযোগ না পেয়ে বাসায় ফিরে রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান। সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, আয়েশা সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বাসায় প্রবেশ করেন এবং সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে নাফিসার স্কুলড্রেস পরে বেরিয়ে যান। যাওয়ার সময় তিনি একটি মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যান।
সুরতহাল প্রতিবেদনে দেখা যায়, লায়লা আফরোজের শরীরে প্রায় ৩০টি এবং নাফিসার শরীরে ৪টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। মোহাম্মদপুর থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন বলেন, হত্যার কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। সন্দেহভাজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার সকালে মা–মেয়ের মরদেহ নাটোর পৌরসভার দক্ষিণ বড়গাছায় নিয়ে দাফন করা হয়। পরিবারের এজাহারে ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিস খোয়া যাওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

