Sunday, December 21

ঢাকা রিপোর্ট:
মজলুম জননেতা আবদুল হামিদ খান ভাসানী—বাংলাদেশের শ্রমিক, কৃষক ও বঞ্চিত মানুষের অধিকার আন্দোলনের প্রতীক। আজ তাঁর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। দিনটি উপলক্ষে টাঙ্গাইলের সন্তোষসহ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান আলোচনা সভা, দোয়া ও স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

স্বাধীনতা ও গণঅধিকার আন্দোলনের অগ্রদূত

মওলানা ভাসানী ছিলেন উপমহাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। ঔপনিবেশিক নির্যাতনের বিরোধিতা, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী অবস্থান, এবং পাকিস্তান আমলে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকার জন্য তিনি জনমানুষের কাছে ‘মজলুম জননেতা’ হিসেবে পরিচিত।

১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তাঁর ঐতিহাসিক ‘বিদায় পশ্চিমা’ ভাষণ বাঙালি জাতির রাজনৈতিক জাগরণে নতুন গতি এনে দেয়।

কৃষক-শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের নেতা

ভাসানী ছিলেন প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠস্বর।

  • ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ছিলেন পূর্ববাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠার দৃঢ় সমর্থক।
  • টেলিগ্রাফ-টেলিফোন শ্রমিক আন্দোলন থেকে শুরু করে খাদ্য আন্দোলন পর্যন্ত সবক্ষেত্রে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন।
  • ১৯৫০-এর দশকে কৃষক-শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার আদায়ে দেশব্যাপী সংগঠনের ভিত্তি তৈরি করেন।

সংকটমুখীন জাতির সামনে সাহসী অবস্থান

পাকিস্তান আমলে প্রায় সব জাতীয় সংকটেই তিনি ছিলেন বাঙালির পক্ষে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই তিনি ছিলেন স্বাধীনতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থানে, যদিও শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে থাকতে পারেননি।

সন্তোষে বিভিন্ন সংগঠনের কার্যক্রম

মওলানা ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকালে টাঙ্গাইলের সন্তোষে ভাসানী মাজার প্রাঙ্গণে কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। পরে রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন—

“মওলানা ভাসানীর অসাম্প্রদায়িক চেতনা, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম এবং সাহসী নেতৃত্ব আজও রাজনীতির জন্য প্রেরণা।”

গবেষকদের মূল্যায়ন

ইতিহাসবিদরা বলছেন—
ভাসানীর রাজনৈতিক দর্শন আজও সমসাময়িক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার, বৈষম্যবিরোধী সংগ্রামের বিষয়ে তাঁর অবস্থান এখনো গবেষণার মূল আলোচ্য।

মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর মৃত্যুদিন শুধু শোকের নয়; এটি বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে নতুনভাবে স্মরণ করার দিন। তাঁর সংগ্রামী অবদান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অনন্য ও অমর হয়ে আছে।

Leave A Reply


Math Captcha
9 + 1 =