গাজীপুর প্রতিনিধি
২৩ অক্টোবর, ২০২৫
গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানার বিটিসিএল টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের ইমাম মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজী (৬০) নিখোঁজের এক দিন পর পঞ্চগড় থেকে উদ্ধার করেছেন পুলিশ। বর্তমানে তিনি পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কথা বলতে পারলেও এখনো শয্যাশায়ী অবস্থায় রয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) ভোরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হেলিপ্যাড এলাকার সড়কের পাশে একটি গাছের সঙ্গে পা বাঁধা বিবস্ত্র অবস্থায় তাকে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে তারা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুফতি মহিবুল্লাহ জানান, বুধবার (২২ অক্টোবর) ফজরের নামাজের পর হাঁটতে বের হলে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে পাঁচজন ব্যক্তি তার মুখ চেপে ধরে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হয়।
তিনি বলেন, “গত কয়েক মাস ধরে আমাকে চিঠি দিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। বলা হচ্ছিল, ইসকনের নেতা চিন্ময়ের পক্ষে কথা বলতে, বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে। হিন্দু-মুসলমান প্রেমের পক্ষে মসজিদে বয়ান দিতে বলেছিল। এতে রাজি হলে কোটি টাকা পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব দেয়, না হলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।”
মুফতি মহিবুল্লাহ আরও বলেন, “অ্যাম্বুলেন্সে তুলে তারা আমাকে বিবস্ত্র করে মারধর করেছে। বোতলে পানি ভরে উরুতে আঘাত করেছে। তাদের ভাষা শুনে মনে হয়েছে, তারা বাংলাদেশি নয়। তারা বলেছে, একে একে সব আলেমদের ক্ষতি করবে।”
পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমান জানান, “তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আগে থেকেই তার মাথায় অস্ত্রোপচারের চিহ্ন রয়েছে। তিনি কিডনি ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল।”
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সী বলেন, “‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন পেয়ে ভোরে ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। পরে তার পরিচয় শনাক্ত করে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। টঙ্গী থানায় নিখোঁজের অভিযোগও দায়ের করেছিলেন পরিবার।”
তিনি আরও জানান, “অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। পরিবারের সদস্যরা এলে তাদের কাছে মুফতি মহিবুল্লাহকে হস্তান্তর করা হবে।”
এদিকে, এ ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে পঞ্চগড়ে বিভিন্ন ইসলামি সংগঠনের নেতাকর্মীরা শহরের চৌরঙ্গী মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পথসভায় পরিণত হয়।
পথসভায় বক্তারা মুফতি মহিবুল্লাহর ওপর নির্যাতনের নেপথ্যে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

