Saturday, November 1

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে টিএফআই-জেআইসি সেলে গুম-খুন এবং জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি পৃথক মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের হাজিরের জন্য জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

বুধবার (২২ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টার পর ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। অন্য সদস্যরা হলেন— বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

সকালে তিন মামলার শুনানিতে প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

প্রেস ব্রিফিংয়ে তাজুল ইসলাম জানান, তিন মামলার মোট ১৫ আসামিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তারের পর ট্রাইব্যুনালে হাজির করেছে। র‌্যাবের টিএফআই সেলে গুম-নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ১৭ আসামির মধ্যে ১০ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

একইসঙ্গে শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের হাজিরের জন্য আগামী ২৯ অক্টোবরের মধ্যে দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ নভেম্বর।

জেআইসি (জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল) এ গুমের অভিযোগে আরেক মামলায় ১৩ আসামির মধ্যে তিনজনকে হাজির করা হয়। তাদের বিরুদ্ধেও একই আদেশ দেওয়া হয়। পলাতকদের হাজিরের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে ২০ নভেম্বরই।

অন্যদিকে, জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে রাজধানীর রামপুরায় ২৮ জনকে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হাজির হওয়া দুজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১। তবে পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়ে পরবর্তী শুনানির তারিখ ঠিক করা হয়েছে ৫ নভেম্বর।

এর আগে, গত ৮ অক্টোবর পৃথক তিন মামলায় মোট ৩৪ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এরপর অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল।

তিন মামলার মধ্যে দুটি মামলায় শেখ হাসিনার নাম রয়েছে। এসব মামলার ৩৪ আসামির মধ্যে ২৫ জনই সেনা কর্মকর্তা। এর মধ্যে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে গত ১১ অক্টোবর হেফাজতে নেওয়া হয় বলে সেনাসদর জানায়।

গ্রেপ্তার হওয়া ১৫ সেনা কর্মকর্তা হলেন— র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অব.), লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম, মেজর মো. রাফাত বিন আলম, মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।

সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজিরকে ঘিরে রাজধানীর কাকরাইল, মৎস্য ভবন ও পল্টন এলাকায় নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ভোর থেকেই ট্রাইব্যুনাল এবং হাইকোর্ট মাজারগেট এলাকাজুড়ে মোতায়েন ছিল পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। নিরাপত্তা ছিল সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায়।

Leave A Reply


Math Captcha
63 − 60 =