কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা:
মণ্ডপে ঢুকতেই চোখে পড়ে থরে থরে সাজানো গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত শিশুদের মুখ। কারও চোখে ভয়, কারও মুখে বিষণ্নতা, কারও হাতে শূন্য থালা। যেন ধ্বংসস্তূপের ভেতর হারিয়ে যাওয়া শৈশব ফিরে এসেছে পূজার আলো-ঢাকের তালে। উৎসবের আনন্দে মিশে গেছে বিষাদের রং, মানবতার আহ্বান।
এমনই ব্যতিক্রমী আয়োজন কিশোরগঞ্জ শহরের বত্রিশ এলাকার প্রগতি সংঘের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এবারের শ্যামাপূজায়। ‘দুঃখরূপং’—অর্থাৎ ‘দুঃখের স্বরূপ’—এই শিরোনামে পূজার থিম সাজিয়েছেন আয়োজকেরা। গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত শিশুদের কান্না, মানবতার আর্তি ও শান্তির আহ্বানই ছিল তাদের এবারের মূল বার্তা।
গতকাল সোমবার (২০ অক্টোবর) রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে পূজার উদ্বোধন করা হয়। আজ মঙ্গলবার ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও থিমভিত্তিক প্রদর্শনী চলবে আরও দুই দিন।
প্রগতি সংঘের সভাপতি রবীন সাহা বলেন,
“আমরা চেয়েছি উৎসবের আনন্দে একটু থেমে মানুষ ভাবুক মানবতার কথা। মা কালী যেমন অন্ধকার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ান, তেমনি আমরা দাঁড়াতে চেয়েছি যুদ্ধের ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আমরা চাই পৃথিবীটা শিশুদের জন্য নিরাপদ হোক—এই প্রার্থনাই মায়ের কাছে নিবেদন করেছি।”
তরুণ আয়োজক সৈকত মজুমদার বলেন,
“এই আয়োজন শুধু শিল্প নয়, এটা প্রতিবাদও। আনন্দ তখনই পূর্ণ হয়, যখন তাতে থাকে মানবতার ছোঁয়া।”
সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে দেখা যায়, দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। কেউ ফুল দিচ্ছেন গাজার শিশুদের ছবির সামনে, কেউ মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করছেন মণ্ডপের দৃশ্য। শুধু হিন্দু নয়, সব সম্প্রদায়ের মানুষও ভিড় করেছেন এই মানবতার মণ্ডপে।
নগুয়া এলাকার শিক্ষক আলিম উদ্দিন বলেন,
“তরুণদের এমন উদ্যোগ মনে করিয়ে দিচ্ছে, শেষ হয়ে যায়নি আশা। মানবতা ঘুরে দাঁড়াবে। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই।”
দর্শনার্থী মৌমা দে বলেন,
“গাজার শিশুদের মুখ দেখে বুকটা ভার হয়ে আসে, চোখে জল আসে। পূজার মধ্যেও মানবতার কথা বলা সত্যিই প্রশংসনীয়।”
আরেক দর্শনার্থী বিশাখা ঘোষ মনে করেন,
“এই পূজা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটা আমাদের বিবেকের উৎসব। যারা এমনভাবে ভাবতে পারে, তারা সমাজে আলো ছড়ায়।”
কিশোরগঞ্জের প্রগতি সংঘের এই শ্যামাপূজা কেবল এক ধর্মীয় উৎসব নয়, হয়ে উঠেছে এক মানবতার মণ্ডপ, যেখানে গাজার শিশুদের মুখে ফুটে উঠেছে শান্তির আহ্বান ও করুণ বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।

