প্রায় ১৮ বছর পর আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁর দেশে ফেরাকে ঘিরে বিএনপির পক্ষ থেকে নীরবে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। গুলশানে তাঁর জন্য নির্ধারিত একতলা বাড়িটি নতুন করে প্রস্তুত করা হচ্ছে। বাড়ির ভেতর-বাইরে ধবধবে সাদা রঙের চুনকাম করা হয়েছে।
বিএনপির লন্ডন শাখা সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান বাংলাদেশ বিমানের একটি সাধারণ যাত্রীবাহী ফ্লাইটে দেশে ফিরবেন। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী বিমানটি প্রথমে সিলেটের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে, এরপর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে। তাঁর সঙ্গে থাকবেন কন্যা জাইমা জারনাজ রহমান।
শনিবার গুলশান এভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির সামনে দুটি গেটের সামনে স্টিলের ব্যারিকেড বসানো হয়েছে এবং সড়কের ওপর তিনটি পুলিশ বক্স স্থাপন করা হয়েছে। বাড়ির প্রাচীর ও ভেতরের কক্ষগুলো সাদা রঙে রাঙানো হয়েছে। বাড়ির নিরাপত্তায় পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ) দায়িত্ব পালন করছে।
গুলশান ২ নম্বর গোলচত্বর থেকে উত্তরে গুলশান এভিনিউ সড়কে অবস্থিত এই বাড়ির আশপাশে একাধিক বিদেশি দূতাবাস রয়েছে। বাড়ির ঠিক সামনে ও পাশে কয়েকটি বহুতল ভবন এবং নির্মাণাধীন স্থাপনা রয়েছে। বাড়ির দক্ষিণ পাশের ৭৯ নম্বর সড়কেই বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’। দুই বাড়ির মধ্যবর্তী এলাকা নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনা হয়েছে এবং দেয়ালের ওপর কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে।
দেড় বিঘা আয়তনের বাড়িটি বেগম খালেদা জিয়ার নামে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর তৎকালীন সরকার এই জায়গা তাঁর নামে বরাদ্দ দেয়। বাড়িটিতে তিনটি বেডরুম, ড্রয়িং, ডাইনিং ও লিভিং রুম রয়েছে। বর্তমানে বাড়ির ভেতরে সংস্কারকাজ চলছে। নতুন দরজা-জানালা লাগানো হলেও এখনো আসবাবপত্র আনা হয়নি।
দলীয় কাজ পরিচালনার জন্য গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়েই বসবেন তারেক রহমান। ভবনটির দ্বিতীয় তলায় তাঁর জন্য একটি কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে। একই সঙ্গে নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও তাঁর জন্য আলাদা একটি কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে। দুটি কার্যালয়েই সংস্কারকাজ চলছে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
তারেক রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার জন্য বিশেষ ডিজাইনের বুলেটপ্রুফ গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সিএসএফ সদস্যসংখ্যা ১০ জন থেকে বাড়িয়ে ২৫ জনের বেশি করা হয়েছে। নিরাপত্তা বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বলেন, চলাচলের সময় তারেক রহমানের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রয়োজন এবং সে ক্ষেত্রে এসএসএফ সবচেয়ে দক্ষ বাহিনী।
বাড়ির সংস্কারকাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন জানান, নতুন বাড়ির সংস্কার এখনো শেষ হয়নি। চাইলে তারেক রহমান আপাতত তাঁর মায়ের বাসাতেও থাকতে পারেন, সেখানে তিনটি কক্ষ প্রস্তুত আছে।
তারেক রহমানের আগমনকে কেন্দ্র করে বিএনপি এটিকে স্মরণীয় করতে চায়। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ সন্ধ্যায় ঢাকার মহানগর নেতাদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনবে এবং তিনি সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেবেন।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৮ মাস কারাভোগের পর অসুস্থ হয়ে পড়লে ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পান এবং ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডনে যান। তাঁর স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান গত ৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরলেও তারেক রহমান ও কন্যা জাইমা জারনাজ রহমান এতদিন লন্ডনেই অবস্থান করছিলেন।

