Saturday, December 20

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা তাঁর বর্তমান শারীরিক অবস্থার ওপরই নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, বিদেশে নেওয়ার মতো অবস্থা হলে বোর্ড সিদ্ধান্ত দেবে। দীর্ঘ ১২–১৪ ঘণ্টার বিমানের যাত্রা একজন অসুস্থ রোগীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বিষয়টি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।

শনিবার বিকেলে এভারকেয়ার হাসপাতালের বাইরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শুক্রবার কারিগরি ত্রুটির কারণে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় পৌঁছাতে না পারলেও একই সময়ে মেডিক্যাল বোর্ডও মনে করেছিল—সেই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার ফ্লাই করা উচিত হবে না। এ কারণে বিদেশযাত্রা কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও তাঁর শারীরিক অবস্থাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করবে।

চিকিৎসক জাহিদ হোসেন জানান, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সবসময় প্রস্তুত থাকলেও সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে খালেদা জিয়ার চিকিৎসাগত নিরাপত্তাকে। তাঁর চিকিৎসায় যুক্ত আছে দেশি–বিদেশি চিকিৎসকরা—যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিশেষজ্ঞরাও এতে অংশ নিচ্ছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য জনগণের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করছে।

তিনি বলেন, দেশের মানুষ, রাজনৈতিক সহ সকল মতাদর্শের মানুষ খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চিকিৎসকদের পরামর্শকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং পুরো প্রক্রিয়া তদারকি করছেন। গত ছয় বছর ধরে মেডিক্যাল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সেবায় যুক্ত রয়েছে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় অত্যন্ত পেশাদারিত্ব দেখিয়েছে।

বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে কাতার সরকার ও অন্তর্বর্তী সরকার সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে সবকিছুর আগে তাঁকে বিদেশে নেওয়ার উপযুক্ত শারীরিক অবস্থা থাকতে হবে বলেও উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার বন্ধ করে খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া করতে হবে।

হাসপাতালের ভিড়ের কারণে অন্য রোগী ও স্বজনদের অসুবিধা হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি সহযোগিতা কামনা করেন। ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিল রোগে ভুগছেন। গত ২৩ নভেম্বর তাঁকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে আনা হলে ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে এবং পরে সিসিইউতে নেওয়া হয়।

ইতিমধ্যে তাঁকে ‘ভিভিআইপি’ ঘোষণা করে এসএসএফ নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড তাঁর চিকিৎসা তদারকি করছে। চীন ও যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকরাও বোর্ডে যুক্ত হয়েছেন।

এদিকে, খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান গতকাল শনিবার সিসিইউতে তাঁকে দেখতে যান। লন্ডন থেকে ফিরে তিনি কয়েক দফা মেডিক্যাল বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনিও বোর্ডের সদস্য এবং লন্ডন থেকে নিয়মিত ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।

অন্যদিকে, খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য নির্ধারিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সকে ‘ভিভিআইপি’ ফ্লাইট ঘোষণা করে শিডিউল অনুমোদন দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ল্যান্ডিং অনুমতিও দিয়েছে। জানা গেছে, ৯ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় আসবে এবং ১০ ডিসেম্বর খালেদা জিয়াকে নিয়ে ঢাকা ছাড়বে। জার্মান এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বেবিচকের কাছে এই সূচি পাঠিয়েছে।

Leave A Reply


Math Captcha
9 + 1 =