Sunday, December 21

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ‘ছাত্রলীগকর্মী’ পরিচয়ে এক অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। ঢালুয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ইমরান হোসেন বর্তমানে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকায় বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে না। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে তার পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

গত সোমবার গভীর রাতে পুলিশ ইমরানকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে এবং পরদিন আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। ইমরান ঢালুয়া ইউনিয়নের চিওড়া গ্রামের বাসিন্দা ও ডেকোরেটর ব্যবসায়ী ইসহাক মিয়ার ছেলে।

পুলিশ জানায়, এসআই আলমগীর হোসেন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেন, যেখানে ২৫ জনের নামসহ ৫০–৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। ইমরান এই মামলার ৬ নম্বর আসামি। অভিযোগপত্রে তার পরিচয় ‘ছাত্রলীগকর্মী’ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে।

এজাহারে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের প্রতিবাদে ঢালুয়া ইউনিয়নে মনতলী ব্রিজের পাশে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের ৫০–৬০ জন নেতাকর্মী একত্র হয়ে সরকারবিরোধী স্লোগান এবং ঝটিকা–মশাল মিছিল করেন। তখন পুলিশ ১ নম্বর আসামিকে গ্রেপ্তার করে এবং তার জিজ্ঞাসাবাদে ইমরানসহ অন্যদের নাম পাওয়া গেছে বলে দাবি করে।

তবে ইমরানের পরিবার অভিযোগ করেছে, ঘটনাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তারা দাবি করে, ইমরান কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নয়। ইমরানের বাবা ইসহাক মিয়া বলেন, “রাত ৩টার দিকে পুলিশ বাড়ি থেকে ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়। কোনো প্রমাণ ছাড়াই ফাঁসানো হয়েছে। পরীক্ষা চলছে—তবুও ছেলেটাকে ছাড়ছে না। আমি দ্বারে দ্বারে ঘুরছি মুক্তির জন্য।”

ঢালুয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেন মজুমদার জানান, ইমরান নিয়মিত শিক্ষার্থী এবং তার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়ে কোনো তথ্য স্কুলের কাছে নেই। তিনি শিক্ষার্থীর দ্রুত মুক্তির দাবি জানান।

নাঙ্গলকোট থানার ওসি এ কে ফজলুল হক দাবি করেন, ঘটনার রাতে গ্রেপ্তার হওয়া অন্যদের তথ্যের ভিত্তিতেই ইমরানের নাম এসেছে। তিনি বলেন, “তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হলে তাকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হবে।”

কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান জানান, শেখ হাসিনার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে এলাকায় কিছু ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। অভিযোগ সত্য না হলে চার্জশিটে নাম রাখা হবে না।

এদিকে, ইমরানের পরিবার ও শিক্ষকরা বলছেন—একজন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রের পরীক্ষার সময়ে জেলে থাকা তার শিক্ষাজীবনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

Leave A Reply


Math Captcha
+ 84 = 94