Saturday, November 1

নিজস্ব প্রতিবেদক | কুষ্টিয়া

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) জুলাই অভ্যুত্থানবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩০ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত এবং ৩৩ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার ও সনদ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১তম সিন্ডিকেট সভায় সর্বশেষ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

🧾 সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত

সিন্ডিকেট সদস্যরা জানিয়েছেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লববিরোধী ভূমিকার কারণে ১৯ জন শিক্ষক ও ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ গঠিত শাস্তি নির্ধারণ কমিটি।
একইসঙ্গে ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যারা পড়াশোনা শেষ করেছেন, তাদের সনদ বাতিল করা হবে, আর অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা হবে

🔍 তদন্ত কমিটির কার্যক্রম

এর আগে গত ১৫ মার্চ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আল-হাদীস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
তদন্তে লিখিত ও মৌখিক সাক্ষ্য, ভিডিও ফুটেজ, সংবাদ প্রতিবেদন ও বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের জুলাই-আগস্ট বিপ্লববিরোধী কার্যকলাপে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়

পরে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সর্বশেষ প্রতিবেদনের আলোকে সিন্ডিকেট তাদের বিষয়ে শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত নেয়।

বরখাস্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তারা

তালিকাভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন—
ড. মাহবুবর রহমান (ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং),
ড. পরেশ চন্দ্র বর্মন (আইসিটি),
ড. দেবাশীষ শর্মা (অর্থনীতি),
শহিদুল ইসলাম (এইচআরএম),
ড. বাকী বিল্লাহ ও ড. রবিউল হোসেন (বাংলা),
ড. কাজী আখতার হোসেন ও ড. শেলীনা নাসরিন (হিসাববিজ্ঞান),
ড. এ. এইচ. এম আক্তারুল ইসলাম ও ড. মিয়া রাসিদুজ্জামান (ইংরেজি),
ড. মাহবুবুল আরফিন (ব্যবস্থাপনা),
ড. তপন কুমার জোদ্দার (আইসিটি),
ড. শাহজাহান মণ্ডল ও ড. রেবা মণ্ডল (আইন),
মাজেদুল হক (মার্কেটিং),
ড. আফরোজা বানু (ইংরেজি),
ড. আমজাদ হোসেন (আল-ফিকহ অ্যান্ড ল),
মেহেদী হাসান (ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট) এবং
ড. জয়শ্রী সেন (সিএসই)।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আছেন—
আলমগীর হোসেন খান, আব্দুল হান্নান, ওয়ালিদ হাসান মুকুট, আব্দুস সালাম সেলিম, ড. ইব্রাহীম হোসেন সোনা, উকীল উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম (শিমুল), জে এম ইলিয়াস, তোফাজ্জেল হোসেন, শেখ আবু সিদ্দিক রোকন এবং মাসুদুর রহমান।

বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা

বহিষ্কৃতদের মধ্যে রয়েছেন—
অর্থনীতি বিভাগের নাসিম আহমেদ জয় (শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক),
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মেহেদী হাসান হাফিজ,
ইতিহাস বিভাগের মুন্সি কামরুল হাসান অনিক,
মার্কেটিং বিভাগের হুসাইন মজুমদার,
বাংলা বিভাগের তরিকুল ইসলাম,
ইংরেজি বিভাগের ফজলে রাব্বী,
ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের মৃদুল রাব্বী ও রাফিদ,
আইন, সমাজকল্যাণ, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, লোক প্রশাসন, চারুকলা, আরবি এবং কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের আরও বহু শিক্ষার্থী।
(পূর্ণ তালিকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে।)

প্রশাসনের মন্তব্য

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, “জুলাই-আগস্ট বিপ্লববিরোধী কর্মকাণ্ডে যারা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, তাদের বিষয়ে আমরা কোনো ছাড় দিচ্ছি না। তদন্তে দোষ প্রমাণিত হওয়ায় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠার বার্তা দেওয়া হলো।

Leave A Reply


Math Captcha
+ 85 = 90