৩ মাসে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে

মেগা প্রকল্প নির্মাণে বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়া উন্নয়নশীল দেশের জন্য সাধারণ ঘটনা। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে এসব ঋণের সদ্ব্যবহার নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো উচ্চাভিলাষী প্রকল্পে বিদেশি ঋণ নিয়েছিল। এসব প্রকল্পের অনেকগুলোর অর্থনৈতিক যৌক্তিকতা নেই এবং বাস্তবায়নের স্বচ্ছতাও প্রশ্নবিদ্ধ—ফলে বেড়েছে ঋণের চাপ।

বর্তমান অন্তবর্তী সরকারও বিদেশি ঋণ নির্ভরতা অব্যাহত রেখেছে। বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্য আনা, রিজার্ভ বৃদ্ধি ও মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বাড়ছে বিদেশি ঋণের পরিমাণ। চলতি বছরের জুন শেষে বিদেশি ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১২ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ১০৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে সরকারের অংশ ৮০ শতাংশের বেশি।

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ বলেছেন, গত ১০ বছরে বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধির হার উদ্বেগজনক পর্যায়ে গেছে। ২০১৬-১৮ সালে অতিরিক্ত ঋণনির্ভর উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে, যার খরচও ছিল অস্বাভাবিকভাবে বেশি।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জানান, জিডিপির অনুপাতে বিদেশি ঋণ কম মনে হলেও সুদের খরচ ও ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। ডলার সংকটের সময় সেই চাপ আরও তীব্র হয়।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বিদেশি ঋণের প্রয়োজনীয়তা ও সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পাইপলাইনে থাকা ঋণের বিষয়ে নতুন করে আলোচনা ও অপ্রয়োজনীয় ঋণ বাদ দেয়ার পক্ষে তারা।

ড. মাসরুর রিয়াজের মতে, ঋণের শর্ত আরও সহনশীল করতে নেগোসিয়েশন জরুরি এবং অপ্রয়োজনীয় অর্থ ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। অন্যদিকে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, যেসব প্রকল্প থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় রিটার্ন পাওয়া যাবে না, সেগুলো বাতিল করাই ভালো।

এদিকে, সরকারের বিদেশি ঋণ বাড়লেও কিছুটা কমেছে বেসরকারি খাতের ঋণ। জুন শেষে মোট বিদেশি ঋণের মধ্যে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ১৯ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *