ঢাকা রিপোর্ট ডেস্ক
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে সাতটি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরের জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই প্রস্তাব তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘গণহত্যা শুরু হওয়ার আট বছর পেরিয়ে গেলেও রোহিঙ্গাদের দুর্দশা অব্যাহত রয়েছে। সংকট নিরসনে উদ্যোগের অভাব রয়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থায়নে ভয়াবহ ঘাটতি রয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমার থেকে। এর সমাধান সেখানেই আছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন অবিলম্বে বন্ধ করতে মিয়ানমার ও আরাকান সেনাবাহিনীর ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে এবং রাখাইনে তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য কাজ শুরু করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এটাই সংকটের একমাত্র সমাধান। মিয়ানমারের বৃহত্তর সংস্কারের কাছে এটিকে জিম্মি করা উচিত নয়। তহবিল হ্রাস পাওয়ায় একমাত্র শান্তিপূর্ণ বিকল্প হচ্ছে তাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা। এটি তাদের আন্তর্জাতিক সুরক্ষা অব্যাহত রাখার চেয়ে অনেক কম সংস্থান ব্যবহার করবে। রোহিঙ্গারা ধারাবাহিকভাবে তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে আসছেন। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে যারা সম্প্রতি সংঘাত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন তাদের প্রত্যাবাসনের অনুমতি দিতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা তার প্রস্তাবে বলেন, ‘প্রথমত, রাখাইনে যুক্তিসঙ্গত স্থিতিশীলতার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বাস্তব রোডম্যাপ প্রণয়ন করা; দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করতে মিয়ানমার ও আরাকান সেনাবাহিনীর ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করা এবং সম্প্রতি যারা বাংলাদেশে এসেছেন এবং যারা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন তাদের ফেরত নেওয়ার মাধ্যমে টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করা; তৃতীয়ত, রাখাইনকে স্থিতিশীল করতে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোগাড় করা এবং স্থিতিশীলতা পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করা; চতুর্থত, রাখাইন সমাজ ও শাসনে রোহিঙ্গাদের টেকসই সংহতকরণে আস্থা তৈরির পদক্ষেপে সহায়তা করা; পঞ্চমত, যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার সম্পূর্ণ তহবিলের জন্য দাতাদের সহায়তাগুলো একত্রিত করা; ষষ্ঠত, জবাবদিহিতা এবং পুনরুদ্ধারমূলক ন্যায়বিচার অনুসরণ করা এবং সপ্তমত, মাদকদ্রব্য সংশ্লিষ্ট অর্থনীতি ধ্বংস করা এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করা।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরার জন্য আর অপেক্ষা করতে পারবে না বিশ্ব। আজ, আসুন আমরা এই সংকট সমাধানের জন্য একসঙ্গে কাজ করার শপথ নেই। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৫ আগস্ট কক্সবাজারের রোহিঙ্গা বিষয়ে আঞ্চলিক সম্মেলনেও প্রধান উপদেষ্টা সংকট নিরসনে সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন।